শহরের যান্ত্রিকতা আর কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে, প্রকৃতির কোলে কয়েকটা দিন কাটাতে চাইলে বান্দরবনই হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য। আমার বন্ধুদের সঙ্গে সম্প্রতি বান্দরবনের একটি বনভ্রমণ ছিল জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। চলুন আপনাদের শেয়ার করি সেই ভ্রমণের খুঁটিনাটি।
🚍 ভ্রমণের প্রস্তুতি ও যাত্রা শুরু
আমরা ছিলাম ৬ জন বন্ধু। ঢাকা থেকে বান্দরবন সদর পর্যন্ত বাসে রওনা দিই রাত ১০টায় (বাস টিকিট: ৯০০ টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত)। সকাল ৬টার দিকে বান্দরবনে পৌঁছে হালকা নাশতা সেরে আমরা একটি চাঁদের গাড়ি (জিপ) ভাড়া করি রুমা বাজার পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। (প্রায় ৪০০০-৫০০০ টাকা/চাঁদের গাড়ি)
📍 গন্তব্য: রুমা – থানচি – রেমাক্রি – আমিয়াখুম – নাফাখুম – বগালেক
🏞️ রুমা বাজাররুমা বাজার হলো পাহাড়ি পথে যাওয়ার প্রথম ধাপ। এখানে সেনাবাহিনীর অনুমতি নিতে হয় এবং স্থানীয় গাইড নিতে হয় (গাইড ফি: ১৫০০-২০০০ টাকা, পুরো ট্রিপের জন্য)। বাজার থেকে শুকনো খাবার, পানি, ইনহেলার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে নিন।
🛶 রেমাক্রি ও নাফাখুম
রুমা থেকে ট্রেকিং ও নৌকাভ্রমণ মিলিয়ে আমরা পৌঁছালাম রেমাক্রি। নদীর দুই পাশে সবুজ পাহাড় আর মাঝে মাঝে দেখা মেলে ঝর্ণার। এখান থেকে হেঁটে পৌঁছাতে হয় নাফাখুম ঝরনায়—যেটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় ঝরনা। বর্ষায় গেলে এর সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়ে যায়।
🌊 আমিয়াখুম ও সাতভাই খুম
নাফাখুম থেকে আরও গভীরে গিয়ে দেখতে পাবেন আমিয়াখুম। এখানে পানি কেমন যেন নীলাভ সবুজ, আর এর চারপাশে প্রাকৃতিক শিলার দেয়াল যেন প্রাকৃতিক দুর্গ। আর পাশেই রয়েছে সাতভাই খুম, ছোট ছোট সাতটি ঝরনার মিলিত রূপ।
🏕️ ক্যাম্পিং: রাতে জঙ্গলের মাঝে
আমরা রাতে তাঁবুতে ছিলাম। আগুন জ্বালিয়ে নিজেরাই রান্না করলাম, চারদিকে জোনাকির আলো, বন্ধুরা মিলে গান– আড্ডা–গল্প–এই সব ছিল সেই রাতে প্রাণের খোরাক। একেবারে মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে, প্রকৃতির কোলে নিঃশব্দ এক শুদ্ধ সময়।
🏞️ বগালেক
পরদিন রওনা দিলাম বগালেকের দিকে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে থাকা এই হ্রদ এক রহস্যময় সৌন্দর্য। এখানকার হাওয়া ঠাণ্ডা আর শান্ত। চাইলে এখানেই রাত কাটানো যায় (কটেজ ভাড়া: ৩০০–৫০০ টাকা/ব্যক্তি)।
🧳 যা যা অবশ্যই সঙ্গে নেবেন
1. ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ
2. ট্রেকিং জুতা
3. ইনহেলার, ব্যান্ডেজ ও ওষুধ
4. পাওয়ার ব্যাংক
5. হালকা শুকনো খাবার (চকলেট, বিস্কুট)
6. পানির বোতল
7. হালকা জ্যাকেট (রাতে ঠাণ্ডা পড়ে)
⚠️ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
1. স্থানীয় গাইড ছাড়া গভীর পাহাড়ে যাবেন না।
2. পাহাড়ি লোকদের প্রতি সম্মান দেখান। ছবি তোলার আগে অনুমতি নিন।
3. প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার করবেন না।
4. পাহাড়ি পথে সাবধানে হাঁটুন, পা পিছলে যেতে পারে।
5. সরকারের দেওয়া পর্যটন নীতিমালা মেনে চলুন।
💰 মোট খরচ (প্রায়)
ঢাকা–বান্দরবন বাস ৳ ৯০০ (একপথ)
চাঁদের গাড়ি + গাইড ৳ ২০০০–২৫০০
নৌকা ও ঝরনা যাত্রা ৳ ৫০০–৭০০
খাবার ও অন্যান্য ৳ ১০০০
কটেজ/ক্যাম্পিং ৳ ৫০০–৭০০
মোট প্রায় ৪৮০০–৫৫০০ টাকা
0 Comments